আলঝেইমার রোগের ওষুধ আবিষ্কারে বিস্ময়কর সাফল্য

বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, যুগ যুগ ধরে ব্যর্থতার পর আলঝেইমার রোগের (ডিমেনশিয়া বা স্মৃতি হারিয়ে যাওয়া রোগের সাধারণ লক্ষণ) চিকিৎসায় একটি ওষুধ বিস্ময়কর সাফল্যের ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, নতুন এই ওষুধটি মানুষের মগজের কার্যক্ষমতা হারানোর গতিকে ধীর করতে সাহায্য করে।

মানুষের মগজের কার্যক্ষমতা লোপ পাওয়ার রোগ আলঝেইমারের প্রতিষেধক হিসেবে একটি ওষুধ আবিষ্কারের পথে বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক অর্জনকে যুগান্তকারী বলছেন গবেষকরা।

যদিও ‘লেকানেমাব’ নামের এই ওষুধের সামান্য কার্যকারিতা রয়েছে আর মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় এর প্রভাব নিয়ে এখনও রয়ে গেছে বিতর্ক। তবে এই ওষুধ আলঝেইমার শনাক্তের প্রাথমিক পর্যায়ে বেশ কাজ করে। আর এ কারণেই অনেকে এটিকে যুগান্তকারী হিসেবে মানতে নারাজ।

‘লেকানেমাব’ মানুষের মগজের আঠালো পদার্থ বেটা এমাইলোয়েডকে আক্রমণ করে। এই আঠালো পদার্থটি আলঝেইমার রোগে আক্রান্ত মানুষের মগজে তৈরি হয়।

আলঝেইমার নিয়ে গবেষকদের হতাশা ও ব্যর্থতার মধ্যে কেউ কেউ ওষুধ প্রয়োগের এই পরীক্ষার ফলাফলকে গবেষণার যুগান্তকারী মোড় হিসেবে মনে করছেন। যুক্তরাজ্যে আলঝেইমার নিয়ে যারা গবেষণা করছেন তারা নতুন পাওয়া এই ফলাফলকে বিস্ময়কর অর্জন বলে মনে করছেন।

৩০ বছর আগে এমাইলোয়েডকে টার্গেট করে গবেষণার ধারণা দেয়া বিজ্ঞানীদের অন্যতম অধ্যাপক জন হার্ডি বলছেন এই অর্জন ‘ঐতিহাসিক’ এবং তা আলঝেইমার রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কারে শুরুর পথ দেখাচ্ছে। এ বিষয়ে এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক টারা স্পাইরেস জোন্স বলেন, ‘পরীক্ষা থেকে পাওয়া ফলাফল আমাদের বিরাট কিছুর সম্ভাবনা দেখাচ্ছে কেননা অনেক দিন থেকেই এই বিষয়ে আমাদের ১০০ ভাগ ব্যর্থতা ছিল।’

বর্তমানে আলঝেইমার রোগে আক্রান্ত রোগীদের অন্যান্য ওষুধ দেয়া তাদের বিভিন্ন উপসর্গ অনুযায়ী তবে সেগুলোর কোনোটিই রোগটি সারাতে ব্যবহার হয় না।

অন্যদিকে, লেকানেমাব হচ্ছে একটি এন্টিবডি যা ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াকে আক্রমণ করতে শরীর থেকেই তৈরি হয় আর এ ক্ষেত্রে প্রযুক্তির মাধ্যমে শরীরের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থাকে বলা হয় মগজ থেকে এমাইলোয়েড জাতীয় পদার্থকে পরিষ্কার করে ফেলতে।

এমাইলোয়েড হলো এক ধরনের প্রোটিন যা অতিরিক্ত আস্তরণ হিসেবে মগজের নিউরোনে থাকে এবং এটি স্বতন্ত্রভাবে অবস্থান নিয়ে আলঝেইমার রোগটির অন্যতম বৈশিষ্ট হিসেবে প্রকাশ পায়।

এ বিষয়ে ব্যাপক আকারে পরিচালিত এক গবেষণায় ১ হাজার ৭৯৫ জন স্বেচ্ছাসেবী অংশ নেন যাদের মধ্যে আলঝেইমার রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলো ছিল। এই গবেষণায় তাদের পনের দিন পরপর একবার করে লেকানেমাব দেওয়া হয়েছিল।

ওষুধ নিয়ে গবেষণাটির ফলাফল উপস্থাপন করা হয়েছে সান ফ্রান্সিসকোতে আলঝেইমার রোগ নিয়ে আয়োজিত এক সম্মেলনে এবং তা নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে প্রকাশিত হয়েছে। তবে এই ফলাফলে রাতারাতি রোগটি সেরে যাবে এমন কিছু ছিল না। গবেষণার ১৮ মাসের চিকিৎসায় ওষুধটি আলঝেইমার রোগে যেভাবে মানুষের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা লোপ পায় তার গতিকে চার ভাগের এক ভাগ কমিয়ে দিতে পেরেছিল।

আশার কথা গবেষণার তথ্য-উপাত্ত মূল্যায়ন করছে যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা এবং ‘লেকানেমাব’ কে আরও বৃহৎ পরিসরে ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দেওয়া যায় কিনা সে বিষয়টি তারা বিবেচনা করছেন। আর এ ক্ষেত্রে আগামী বছর অন্যান্য দেশে ওষুধটি প্রয়োগের অনুমোদন পেতে এরই মধ্যে পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ইসাই এবং বায়োজেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //